মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলা-ঢাকা নৌরুটে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওয়াটার বাসের দিবা সার্ভিস। আগে রাতে লঞ্চে করে আট থেকে দশ ঘণ্টা সময় যাতায়াত করতে হতো। কিন্তু এখন মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় দিনের আলোতে ওয়াটার বাসে যাতায়াত করা যায়। এতে যাত্রীদের চলাচল অনেক সহজ, আরামদায়ক এবং নিরাপদ হয়েছে। দ্রুতগতির ওয়াটার বাসে চলাচলে নৌবিহারের আনন্দ পাচ্ছেন যাত্রীরা। মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা এবং মরদেহ পরিবহনেও রয়েছে বিশেষ সুযোগ।
দ্বীপজেলা ভোলা থেকে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌযান। আর বছরের পর বছর এখানকার মানুষ এই নৌযানের ওপরই নির্ভরশীল। এতদিন তারা দিনের প্রথম ভাগ অর্থাৎ দুপুর ২টার আগে কিংবা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর ঢাকা যেতে পারতেন না। রাতে কুয়াশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হতো। গত মাসে দ্রুত গতির ওয়াটার বাস গ্রীন লাইন এবং এ মাসে অ্যাডভেঞ্চার চালু হওয়ায় এখন ভোলার মানুষ দিনের বেলায়ও ঢাকায় যেতে পারছেন। আসতেও পারছেন। এতে নৌপথের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের মাধ্যমে নৌবিহারের বাড়তি সুবিধা থাকায় ভোলায় পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।
মুমূর্ষু রোগীর জরুরি চিকিৎসার জন্য বিনা ভাড়ায় ঢাকা নেওয়া এবং ঢাকা থেকে বিনা ভাড়ায় মরদেহ ভোলায় আনারও সুযোগ রয়েছে গ্রীন লাইন ওয়াটার বাসে। এখন জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীরা ঢাকায় গিয়ে আবার দিনের মধ্যেই ভোলায় ফিরে আসতে পারছেন। যে কারণে খুব অল্প সময়ে ওয়াটার বাস গ্রীন লাইন এবং অ্যাডভেঞ্চার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু ভাড়া কমানোর দাবিও রয়েছে যাত্রীদের।
সাবেক মন্ত্রী মরহুম নাজিউর রহমানের স্ত্রী শেখ রেবা রহমানের সঙ্গে দেখা হয় গ্রীন লাইনে। সার্ভিস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগে যে রকম মানুষ রাতে উঠত, ৮/১০ ঘণ্টা সময় লাগত, খুব কষ্ট হতো। এটা যেহেতু ৫ ঘণ্টায় যায় সেহেতু মানুষের জন্য অনেক সুবিধা। সরকারি চাকরিজীবীরা সময়মতো গিয়ে অফিস করতে পারেন।’
চাকরি পরীক্ষার্থী মাইনুল বলেন, ‘আগে যখন আমাদের বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশ নিতে হতো, তখন আমরা ঠিকমতো যেতে পারতাম না। এই সার্ভিস চালু হওয়াতে আমরা দিনেই ঢাকায় যেতে পারছি।’
গ্রীন লাইন ভোলা অফিসের কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম রনি বলেন, ‘গ্রীন লাইনে মুমূর্ষু রোগীদের ভাড়া নেওয়া হয় না। ঢাকা থেকে যে কোনো মৃতদেহ দুইজন স্বজনসহ বিনা ভাড়ায় ভোলায় আনি, প্রয়োজনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি।
তবে কোনো প্রকার পরিকল্পনা ছাড়া তড়িঘড়ি করে ইলিশা ঘাট থেকে দিনের বেলায় অত্যাধুনিক ওয়াটার বাস চালু হলেও এসব বাসকেন্দ্রীক প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ইলিশা ঘাটে নেই গ্যাংওয়ে, জেটি, যাত্রী ছাউনি ও টয়লেট ব্যবস্থা। নদী তীরে ব্লক থাকায় পন্টুনে ঠিক মতো ওয়াটার বাস ভিড়তে পারছে না। এছাড়া গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধাও নেই ইলিশা ঘাটে।
ভোলা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘যাত্রী সাধারণের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিআইডব্লিওটিএ একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এতে যাত্রী ছাউনি বিশ্রামাগার এবং টয়লেটের ব্যবস্থাসহ যাত্রীদের প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা থাকবে। প্রকল্পটি দ্রুতই বাস্তবায়িত হবে।’
ভোলা জেলার ৭ উপজেলার ২১টি লঞ্চ ঘাট থেকে প্রতিদিন ২৮টি লঞ্চে করে ৩০ থেকে ৪০ হাজার যাত্রী ঢাকা-ভোলা রুটে চলাচল করে।
Leave a Reply